বগুড়ার গাবতলী উপজেলার সুখানপুকুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী বিএনপি নেতা আশরাফুল হক গোল্লা (৫৮) সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাননি। নির্বাচন নিয়ে বিরোধে তাকে নিজ দলের লোকজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। আত্মরক্ষায় পালাতে গিয়ে তিনি সেতুর রেলিংয়ের সঙ্গে ধাক্কা খান। চিকিৎসায় কালক্ষেপণ করার পর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

শনিবার দুপুরে বগুড়া প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তার মেয়ে আফরোজা সুলতানা গীতি এসব অভিযোগ করেন।

এর আগে তিনি আদালতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন। আদালত এ ব্যাপারে তদন্ত করে আগামী ২১ এপ্রিলের মধ্যে রিপোর্ট দিতে পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।

গাবতলী থানার বর্তমান ওসি সিরাজুল ইসলাম মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

আসামিরা হলেন— নিহত চেয়ারম্যান প্রার্থী বিএনপি নেতা আশরাফুল হক গোল্লার মোটরসাইকেলচালক সেলিম মোল্লা, প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহাদত হোসেন মন্টু, ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও অপর প্রার্থী এজাজ আহমেদ লাভলুর শ্যালক আতিকুর রহমান পিন্টু, ফুয়াদ ফকির এবং এরশাদ ফকির।

শনিবার দুপুরে বগুড়া প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নিহত চেয়ারম্যান প্রার্থী সুখানপুকুর ইউনিয়ন বিএনপির প্রস্তাবিত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আশরাফুল হক গোল্লার মেয়ে আফরোজা সুলতানা গীতি জানান, গত ৩১ জানুয়ারি গাবতলী উপজেলার সুখানপুকুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন তার বাবা। ছয় প্রার্থীর মধ্যে ২ নম্বর আসামি বিএনপি নেতা শাহাদত হোসেন মন্টু এবং ৩ নম্বর আসামি বিএনপি নেতা আতিকুর রহমান পিন্টুর ভগ্নিপতি এজাজ আহমেদ লাভলু ও নৌকা প্রার্থী ছিলেন আলমগীর রহমান।

বাবা (গোল্লা) নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পর থেকে আসামি মন্টু, ফুয়াদ, এরশাদ এবং তাদের লোকজন প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে বিরোধিতা করে আসছিলেন। প্রতিবন্ধকতা ও অপপ্রচার চালান। বাবা (গোল্লা) প্রথমে আমলে না নিলেও পরে প্রতিবাদ করলে আসামিদের সঙ্গে তার সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়। এতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শাহাদত হোসেন মন্টু আরও ক্ষিপ্ত হন। তিনি গোল্লার অন্যতম সহযোগী ও তার মোটরসাইকেলচালক সেলিম মোল্লাকে টাকার বিনিময়ে হাত করেন। এর পর সবাই মিলে বাবাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

গত ২৬ জানুয়ারি নির্বাচনি প্রচার শেষে গোল্লা মোটরসাইকেলে বগুড়া শহরে চোখের চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর পর তিনি সেলিম মোল্লার সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির ২০০ গজ দূরে খলিশাকুড়ি ব্রিজের কাছে পৌঁছালে পরস্পর যোগসাজশে আসামিরা পথরোধ করেন।

এর পর মন্টুর নির্দেশে সেলিম মোল্লা কাছে থাকা চাইনিজ কুড়াল বের করে বাবার (গোল্লার) মাথায় আঘাত করেন। জীবন বাঁচাতে তিনি মোটরসাইকেলে দ্রুত পালাতে চেষ্টা করলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার উত্তর পাশে পড়ে যান। এ সুযোগে আসামিরা গাবতলীর দিকে পালিয়ে যান। সেলিম মোল্লা নিজেকে হত্যার দায় থেকে বাঁচাতে গোল্লার পকেটে থাকা সাড়ে তিন হাজার টাকা বের করে কৌশলে পথচারীদের সামনে চিৎকার করতে থাকেন।

প্রথমে গোল্লাকে গাবতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। ঘটনার পর ৩০ মিনিট অতিবাহিত হলেও সেলিম মোল্লা ঘটনাটি তার পরিবারকে অবহিত করেননি। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এলেও সেলিম মোল্লা আসল ঘটনা গোপন করেন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঠিকমতো চিকিৎসা না দিয়ে গোল্লাকে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে বিকাল ৫টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ছাড়া প্রচার করেন গোল্লা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। ময়নাতদন্ত শেষে পর দিন লাশ দাফন করা হয়। নির্বাচন কমিশন সুখানপুকুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন স্থগিত করেন।

আফরোজা সুলতানা গীতি আরও জানান, বাবাকে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে গাবতলী থানায় হত্যা মামলা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তৎকালীন ওসি জিয়া লতিফুল ইসলাম তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেন। বাধ্য হয়ে গত ৯ ফেব্রুয়ারি আদালতে উল্লিখিত পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। তিনি আসামিদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ প্রসঙ্গে বগুড়ার গাবতলী পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও পৌর মেয়র সাইফুল ইসলাম জানান, সুখানপুকুর ইউনিয়নের নির্বাচনের আগে বৈঠক হয়। সেখানে গোল্লা নির্বাচনে অংশ এবং পিন্টু ও মন্টু ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এবং সম্পাদক পদ দাবি করেন। কিন্তু নির্বাচনে হঠাৎ করে মন্টু ও পিন্টুর আত্মীয় কেন প্রার্থী হলেন তা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়। এখন গোল্লার মেয়ে গীতি দাবি করছেন, তার বাবাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ময়নাতদন্তের ও পিবিআইয়ের তদন্ত রিপোর্ট পেলে নিশ্চিত হওয়া যাবে গোল্লা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন না তাকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি সংশ্লিষ্ট সবার কাছে নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছেন। মামলার আসামিরা এলাকায় না থাকায় ও ফোন বন্ধ রাখায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

 

কলমকথা/বিসুলতানা